Resilient Homestead and Livelihood Support to the Vulnerable Coastal People of Bangladesh (RHL) Project

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রায় প্রতি বছর এ দেশ বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত বাংলাদেশের জনগণের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলশ্রুতিতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক তহবিলের সংস্থান রয়েছে; তন্মধ্যে United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC) বা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের আওতায় দুটি তহবিল Green Climate Fund (GCF) এবং Adaptation Fund (AF) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১০ সালে ১৬তম Conference of the Parties (COP)-এর সিদ্ধান্তক্রমে GCF গঠন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো বা প্রশমন (Mitigation) করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সাথে অভিযোজন (Adaptation) কার্যক্রমে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা। উন্নত দেশসমূহ ২০২০ সাল হতে জলবায়ু পরিবর্তন খাতে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ অর্থ অভিযোজন ও প্রশমন উভয় খাতে সমান ভাগে ব্যয় করা হবে। উন্নত দেশসমূহ কর্তৃক প্রদত্ত এ অর্থের একটি অংশ GCF এর মাধ্যমে ব্যয় করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) Green Climate Fund এবং Adaptation Fund এ-দু’টি তহবিলের Accredited Entity হিসেবে কাজ করার স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং GCF এর অর্থায়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সংবেদনশীল, জলবায়ু পরিবর্তন উপকূলীয় অঞ্চলের বসবাসকারীদের জীবন ও জীবিকার ওপর নতুন নিতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। ১৯টি জেলা নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল গঠিত, যা দেশের মোট ভূমির প্রায় ২০% এবং চাষযোগ্য জমির ৩০% এর বেশি। এ উপকূলীয় অঞ্চলে ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি লোকের বাসস্থান, যার মধ্যে ৩০% এরও বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। প্রতি দশ বছরে উপকূলীয় এলাকার গড় তাপমাত্রা ০.০৯৭℃ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং উপকূলীয় এলাকা ইতিমধ্যে উচ্চ লবণাক্ততার (>৫পিপিটি) সংস্পর্শে এসেছে। ১৯০১ থেকে ২০১০ সালে মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ১.৭মিমি বেড়েছে এবং ১৯৯৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রতি বছর ২.৮∓০.৮মিমি বেড়েছে। এটি ২১০০ সালের মধ্যে ০.৫৩ থেকে ০.৯৭ মিটারের মধ্যে বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অঞ্চলের গড় বৃদ্ধির হার থেকে বেশি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠী মূলত তিনটি ঝুকির মধ্যে পতিত হচ্ছে:

(ক) জলবায়ু সংবেদনশীল জীবিকা

পিজির পূর্ণরূপ হচ্ছে পিটুইটারী গ্রন্থি যা মাছের খুলির মধ্যস্থ মাথার পেছনের অংশে অবস্থিত কুঠুরিতে থাকে। মেরুদন্ডী সকল প্রাণীর পিজি থাকে যা থেকে নির্দিষ্ট সময়ে নি:সৃত হরমোন তাকে প্রজনন কাজে প্রণোদিত করে। হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে মাছকে প্রজননে প্রণোদিত করার জন্য এই পিজি হরমোন ব্যবহৃত হয়। উক্ত প্রকল্প আমদানী নির্ভরতা হ্রাস করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ লক্ষ্যে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করাই মূলত উদ্যোগটির উদ্দেশ্য। বর্তমানে দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে এই পিজির বিশাল চাহিদা রয়েছে যার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানী করে মেটানো হয়।

(খ) নিচু এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি

উপকূলীয় বাসিন্দাগণ স্থানীয় বাঁশ, কাঠ ও মাটি দিয়ে তৈরি বাড়ীতে বসবাস করে, যা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং উচ্চ জোয়ারে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলবায়ু-সহনশীল আবাসনের অভাব একটি গুরুতর দারিদ্র্যের ফাঁদ তৈরি করে, কারণ উপকূলীয় বাসিন্দাদের আয়ের বেশিরভাগ ঘর-বাড়ী মেরামতের জন্য ব্যয় করতে হয়, এমনকি স্থানীয় বাসিন্দাগণ ধার-দেনা করেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ী মেরামত করে থাকেন।

(গ) নিরাপদ পানীয় জলের অভাব

সমূদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে উপকূলীয় এলাকায় দেখা যাচ্ছে তীব্র খাবার পানির সংকট।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং চরম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তাঁদের উন্নত ও টেকসই বিকল্প জীবিকার উপায় প্রদানের লক্ষ্যে জিসিএফ-এর অর্থায়নে পিকেএসএফ “Resilient Homestead and Livelihood Support to the Vulnerable Coastal People of Bangladesh (সংক্ষেপে RHL)” )” শীর্ষক প্রকল্পটি গত ১০-১৩ জুলাই ২০২৩ সময়ে অনুষ্ঠিত জিসিএফ-এর ৩৬তম বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়। RHL প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং চরম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তাঁদের উন্নত ও টেকসই বিকল্প জীবিকার উপায় প্রদান করা। প্রকল্পটি সাতটি উপকূলীয় জেলার (কক্সবাজার, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা) ২৯টি উপজেলার আনুমানিক ৩৬২, ৪৭৫জন লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা পাবে। পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির মোট বাজেট ৪৯.৯৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার, যার মধ্যে ৪২.২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার জিসিএফ প্রকল্প সহায়তা (grant) হিসেবে প্রদান করবে অবশিষ্ট ৭.৭৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার সহায়ক তহবিল) এবং in-kind contribution হিসেবে পিকেএসএফ ও সহযোগী সংস্থা প্রদান করবে।

প্রকল্পটির উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:

  1. উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল বাড়ি নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ/বসতভিটা উচুকরণ,
  2. কাঁকড়া হ্যাচারি/ নার্সারী স্থাপন ও জলবায়ু পরিবর্তণ সহনশীল কাঁকড়া চাষ,
  3. মাঁচা পদ্ধতিতে ছাগল/ভেড়া পালন,
  4. বসতবাড়ীর আঙিনায় লবণাক্ততা সহনশীল সবজি চাষ,
  5. বাড়ীর আঙ্গিনায় এবং কাঁকড়া ঘেরে ম্যানগ্রোভ বনায়ন ইত্যাদি।

পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি বাংলাদেশের সাতটি উপকূলীয় জেলার জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের জলবায়ু পরিবর্তনে টিকে থাকার সক্ষমতা (Climate resilience) এবং আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়ন করবে। পিকেএসএফ-এর ১৬টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের “প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা” নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতকর্তা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি “প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা” নির্বাচনের জন্য প্রকল্প দলিলে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৬টি সংস্থাকে নির্বাচন করে। আদ-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার, এই প্রকল্পটি খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলাতে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে মনোনীত হয়েছে।


প্রকল্প কর্মকর্তাবৃন্দ

ক্রমিক নং নাম ও পদবী ছবি
মোঃ আব্দুল আজিজ
প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর
মোঃ আল আমিন
টেকনিক্যাল অফিসার (এনভায়রনমেন্ট এন্ড মনিটরিং)
মোঃ মেহেদী হাসান
এডমিন এন্ড একাউন্টস্ অফিসার
মোঃ ইমন মুন্সি
কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট অফিসার (সিভিল)
শেখ মিরাজুল ইসলাম
কমিউনিটি মবিলাইজেশন অফিসার (ডিপ্লোমা এগ্রিকালচার)
মাহতাবুজ জামান
কমিউনিটি মবিলাইজেশন অফিসার (ডিপ্লোমা ফিশারিজ)
গাজী সাইফুল ইসলাম
কমিউনিটি মবিলাইজেশন অফিসার (ডিপ্লোমা ফরেষ্ট্রি)
মোঃ মাজেদুল ইসলাম
কমিউনিটি মবিলাইজেশন অফিসার (ডিপ্লোমা লাইভস্টোক)